আন্তর্জাতিক

ইসরাইলে ইরানের হামলা: কোন দেশের কত খরচ হলো?

Share with

ইসরাইল দাবি করেছে, গত শনিবার রাতে ইরান যেসব ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে তার বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জর্ডানের সাহায্য নিয়ে রুখে দেওয়া হয়েছে। যদিও ইরান দাবি করেছে, তাদের হামলার লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে।

Advertisement

গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। ওই হামলার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করে তেহরান। বদলা হিসেবে গত শনিবার রাতভর ইসরাইলে শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। 

ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) রোববার বলেছে, ইরান থেকে প্রায় ৩৬০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছোড়া হয়েছিল। 

আইডিএফের ভাষ্য, একটি সফল প্রতিরক্ষা মিশনের মাধ্যমে ইরানি হুমকির (হামলা) ৯৯ শতাংশ পথিমধ্যে রুখে দেওয়া হয়েছে। এই কাজে ইসরাইলের খরচ দাঁড়াতে পারে ৮০০ মিলিয়ন পাউন্ড। তবে তারা অনেক জীবন বাঁচিয়েছে। একই সঙ্গে ইরানের সামরিক বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে।

ইরানের সামরিক পরিকল্পনাটিকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার হামলার কৌশলের মতো মনে হয়। তেহরান ব্যাপক মাত্রায়, জটিল আক্রমণের কৌশলের মাধ্যমে ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে পরাভূত করার চেষ্টা করছিল।

ইসরাইলে হামলায় তুলনামূলক ধীরগতির ড্রোন ব্যবহার করে ইরান। আবার তারা দ্রুতগতির ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। পাশাপাশি ছিল উচ্চগতির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও।

যদিও ইরানের হামলার বিষয়টি আগেই জানা গিয়েছিল। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান রোববার বলেছেন, হামলার বিষয়ে তারা প্রতিবেশী দেশগুলোকে আগেই সতর্ক করেছিল। অন্তত ৭২ ঘণ্টা আগে তারা নোটিশ দিয়েছিল।

লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের গবেষক সিদ্ধার্থ কৌশল বলেন, ইরানের সর্বশেষ এই হামলার লক্ষ্য ছিল ইসরাইলের ক্ষয়ক্ষতি করা। কিন্তু তা হয়নি। ফলে তা ইরানের সামরিক বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য ক্ষতিকর হয়েছে।

রাতের বেলার এই হামলায় ব্যবহৃত ধীরগতির ইরানি ড্রোনগুলো প্রতিহত করার ক্ষেত্রে ইসরাইলের জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য জরুরি ছিল।

যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা প্রায় ৭০টি ইরানি ড্রোন ও তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, তার দেশের রয়্যাল এয়ারফোর্সও (আরএএফ) হামলা প্রতিহত করেছে। তবে সংখ্যা উল্লেখ করেননি তিনি।

বিভিন্ন প্রতিবেদন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মিত্র জর্ডান তার আকাশসীমায় কয়েক ডজন ইরানি ড্রোন ভূপাতিত করেছে।

ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলছে, হামলা চালাতে ইরান থেকে ১৭০টি ড্রোন পাঠানো হয়েছিল। এগুলো সম্ভবত শাহেদ ঘরানার ড্রোন। ইসরাইলের আকাশসীমায় পৌঁছানোর আগেই এগুলো ধ্বংস করা হয়েছিল।

ইরানের ড্রোন প্রতিহত করার জন্য ইসরাইল যথেষ্ট সময় পেয়েছিল। ধীরগতির এই ড্রোনগুলোর ইরান থেকে ইসরাইলে পৌঁছাতে ছয় ঘণ্টার মতো সময় লাগে।

তবে কিছু ইসরাইলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইরান এই হামলায় দ্রুতগতির ড্রোনও ব্যবহার করেছিল।

ইরানের হামলা রুখতে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্যান্য দেশের হঠাৎ অংশগ্রহণ চমক হতে পারে। তবে এই হামলা ঠেকাতে পরিকল্পনা করার জন্য অনেক সময় পেয়েছে ইসরাইল ও তার মিত্ররা।

দ্য ক্রাডল বলছে, হামলা চালাতে ইরানের যে ব্যয় হয়েছে তার চেয়ে ঠেকাতে ইসরাইলের খরচ হয়েছে ৯৭ গুণের বেশি অর্থ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ঠেকাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইসরাইলি জোটের হিসাব ছাড়াই শুধু ইসরাইলের খরচ হয়েছে প্রায় ১৩৫ কোটি ডলার। 

অপরদিকে ইরানের সামরিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইসরাইলে হামলায় ব্যবহৃত দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্রের মূল্য মাত্র ৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। যা তেল আবিবের ব্যয়ের মাত্র দুই দশমিক ৫ শতাংশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *